Saturday, August 09, 2025

স্বপ্না দত্ত, আমার মা: চতুর্থ অধ্যায়, প্রথম পরিচ্ছেদ

গতকাল, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫ (২২ শ্রাবণ ১৪৩২), আমার মা স্বপ্না দত্তের শ্রাদ্ধকাজ হয়েছে। এর আগের দিন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫ (২১ শ্রাবণ ১৪৩২) ঘাটকাজ (ঘাটশ্রাদ্ধ) করা হয়েছে। এখন চতুর্থ অধ্যায় — শ্রাদ্ধ অধ্যায় লেখার সময়। 

এই লেখা শুরু করার পর বেশ কিছু ঘণ্টা পরে দেখছি লেখাটা অত্যধিক দীর্ঘ হয়ে পড়ছে যা আমার লেখা এবং আপনার পড়া, দুইয়ের জন্যেই অসুবিধা। তাই, এই চতুর্থ অধ্যায়টিকে তিনটি আলাদা পরিচ্ছেদে ভাগ করছি— ১) উপক্রমণিকা: শ্রাদ্ধ এবং শ্রদ্ধা, ২) ঘাটকাজপর্ব, ৩) শ্রাদ্ধদিবস। 

আপাততঃ চতুর্থ অধ্যায়, প্রথম পরিচ্ছেদ শুরু করছি। অনুমতি দেবেন।

একজন মহিলা নীল ও সোনালি শাড়ি পরিহিত, হাত জোড়া করে প্রার্থনা করছেন। পেছনে একটি মন্দিরের মূর্তিতে দেবী দুর্গা এবং অন্যান্য দেবদেবীদের ভাস্কর্য দেখা যাচ্ছে।
স্বপ্না দত্ত, আমার মা।
নৈমিষারণ্য মন্দির প্রাঙ্গণে। নৈমিষারণ্য বর্তমানে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে।
৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখের ছবি।

শ্রাদ্ধ এবং শ্রদ্ধা

শ্রাদ্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো মাতা, পিতা বা পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি ও মুক্তি নিশ্চিত করা। এটি এমন একটি অনুষ্ঠান যা জীবিত ও মৃতের মধ্যে এক অদৃশ্য সেতু নির্মাণ করে। এই অনুষ্ঠানে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হয়, এবং তাঁদের ঋণ স্বীকার করে তাঁদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করা হয়।

সনাতন ধর্ম অনুসারে আত্মা অমর, অক্ষয়, অবিনশ্বর। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ২.২০ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন— "न जायते म्रियते वा कदाचिन्, नायं भूत्वा भविता वा न भूयः। अजो नित्यः शाश्वतोऽयं पुराणो, न हन्यते हन्यमाने शरीरे॥" (বাংলা লিপি: "ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিৎ নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ, অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো, ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।" বাংলা অনুবাদ: আত্মার কখনও জন্ম হয় না এবং কখনও মৃত্যু হয় না। সে কোনদিন অস্তিত্বহীনও হয়নি, ভবিষ্যতেও অস্তিত্বহীন হবে না আত্মা জন্মহীন, নিত্য, শাশ্বত, শরীরের মৃত্যু হলে বা দেহকে হত্যা করলেও আত্মার মৃত্যু হয় না")।

"শ্রাদ্ধ" শব্দটি এসেছে "শ্রদ্ধা" থেকে, যার অর্থ বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও ভক্তি। শ্রাদ্ধের সময় শ্রদ্ধা মৃত ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা, সম্মান এবং কর্তব্যবোধের প্রকাশ।

আপস্তম্ব ধর্মসূত্র অনুযায়ী "श्रद्धया दीयते यत्तत् श्राद्धम्।" (বাংলা লিপি: "শ্রদ্ধয়া দীয়তে যত্তৎ শ্রাদ্ধম্। বাংলা অনুবাদ: শ্রদ্ধার সাথে দেওয়া হয়, তাই হলো শ্রাদ্ধ")।

মনুসংহিতায় বেশ কয়েকবার শ্রাদ্ধ সম্পর্কে বলা হয়েছে। শ্লোক ৩.৮২: "कुर्यादहरः श्राद्धं अन्नाद्येनोदकेन वा। पयोमूलफलैर्वापि पितृभ्यः प्रीतिमावहन्।।" (বাংলা লিপি: "কুর্যাদহরঃ শ্রাদ্ধং অন্নাদ্যেনোদকেন বা, পয়োমূলফলাইর্‌বাপি পিতৃভ্যঃ প্রীতিমাবহন্"। বাংলা অনুবাদ: "গৃহস্থ ব্যক্তি যদি অন্ন, জল, দুধ, শাক-ফল ইত্যাদি দিয়ে শ্রাদ্ধ করেন, তবে তা পূর্বপুরুষদের অনুগ্রহ–প্রাপ্তির আধার হয়")। 

মনুসংহিতায় শ্লোক ৩.২৭৫–এ বলা হয়েছে— "यद् यद् ददाति विधिवत् सम्यक् श्रद्धासमन्वितः। तत् तत् पितॄणां भवति परत्रानन्तमक्षयम्।। (বাংলা লিপি: "যদ্ যদ্ দদাতি বিধিবৎ সম্যক্ শ্রদ্ধাসমন্বিতঃ, তৎ তৎ পিতৃণাং ভবতি পরত্রানন্তমক্ষয়ম্"। বাংলা অনুবাদ: "যে ব্যক্তি নিয়ম অনুযায়ী, সতত ও বিশ্বাসসহ দান করেন, তাঁর জন্য পিতৃরা পরলোকেও অনন্য ও অবিনশ্বর ফল লাভ করেন)"।

সুবলচন্দ্র মিত্র সংকলিত "সরল বাঙ্গালা অভিধান"(অষ্টম সংস্করণ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী "শ্রাদ্ধ" শব্দটি একটি বিশেষণ। শব্দ + ষ্ণ যুক্তার্থে "শ্রাদ্ধ" শব্দের ব্যুৎপত্তি। এই শব্দের মূল অর্থ "শ্রদ্ধাযুক্ত"। মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাপূর্বক অনুষ্ঠিত দানাদি কার্য, পিতৃকৃত্য।

একটা জিনিস স্পষ্টতঃ বোঝা যাচ্ছে — শ্রাদ্ধের সাথে শ্রদ্ধার একেবারে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আজ এই লেখা শুরুর কিছুক্ষণ আগে রিক্সা চেপে গরফা কথামৃত উদ্যানের সামনের রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। প্রাচীরে কয়েকটি সুন্দর ভাস্কর্য আর চিত্রকলা রয়েছে। এইগুলো আগেও রাস্তা দিয়ে যেতে আসতে চোখে পড়েছিল, এইবার স্বামী বিবেকানন্দের একটি উক্তি হয়তো একটু বেশীই মন ছুঁয়ে গেল। 

সেটি স্বামী বিবেকানন্দের একটি উক্তি। একটি প্রাচীরের ওপর রিলিফ বা ভাস্কর্যের মতো করে লেখা আছে। উক্তিটি হলো: "যদি সত্যিই মন থেকে কিচ্ছু করতে চাও তাহলে পথ পাবে, আর যদি না চাও তাহলে অজুহাত পাবে।"
"যদি সত্যিই মন থেকে কিছু করতে চাও, তাহলে পথ পাবে, আর যদি না চাও তাহলে অজুহাত পাবে।" — স্বামী বিবেকানন্দ।

শ্রাদ্ধের ক্ষেত্রেও মনোযোগ এবং আন্তরিকতা একান্ত আবশ্যক। শ্রীমদ্ভগবদগীতা ১৭.২৮ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন— "अश्रद्धया हुतं दत्तं तपस्तप्तं कृतं च यत्। असदित्युच्यते पार्थ न च तत्प्रेत्य नो इह॥" (বাংলা লিপি: "অশ্রদ্ধয়া হুতং দত্তং তপস্তপ্তং কৃতং চ যৎ। অসদিত্যুচ্যতে পার্থ ন চ তত্‌ প্রেত্য নো ইহ॥" বাংলা অনুবাদ: "হে পার্থ ! অশ্রদ্ধা সহকারে হোম, দান বা তপস্যা যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তাকে বলা হয় 'অসৎ'৷ সেইসমস্ত ক্রিয়া ইহলোকে ও পরলোকে ফলদায়ক হয় না॥")

শুধুমাত্র সনাতন ধর্মই নই। অন্যান্য সকল ধর্ম ও সম্প্রদায় — আস্তিক, নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী — বিজ্ঞানী, দার্শনিক, বস্তুবাদী — সকলেই নিষ্ঠার সাথে, শ্রদ্ধার সাথে, মনোযোগ দিয়ে যে কোনও কাজ করতে বলে থাকেন।

ইসলামে "খুশু" (আরবী: خشوع) শব্দের অর্থ নামাজের সময় হৃদয়ের বিনয়, মনোযোগ ও গভীরতাসহ আল্লাহ–র স্মরণ করা। আল্লাহ স্থান–কাল–পাত্র দেখেন না। এক ব্যক্তি প্রচুর ধনসম্পত্তির অধিকারী অথবা দরিদ্র; এক ব্যক্তি সুশোভিত স্বর্ণমহলে বসে নামাজ পড়ছেন, নাকি ছোট কুঁড়েঘরে থেকে — আল্লাহ তা দেখেন না। একমাত্র মনোযোগ আর শ্রদ্ধার সাথে নামাজ পড়লেই — আল্লাহকে স্মরণ করলে — আল্লাহ তা কবুল করেন

বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে— "অবহেলা-মুক্ত মনোযোগ হলো অমরত্বের পথ; অবহেলা হলো মৃত্যুর পথ। যাঁরা মনোযোগ সহকারে কাজ করেন, তাঁদের মৃত্যু হয় না; অবহেলাকারীরা জীবিত থেকেও মৃতের ন্যায়" (ধম্মপদ ২৪)। কালাম সুত্ত (সূত্র)–তে গৌতম বুদ্ধ বলেছেন— "শুধু শোনা কথা, প্রথা, গুজব, শাস্ত্র, যুক্তি বা গুরু বললেন বলে কিছু বিশ্বাস করো না। যখন বুঝবে, কিছু কল্যাণকর, নৈতিক ও উপকারী — তখনই তা গ্রহণ ও অনুশীলন করো।" মহাপরিনিব্বাণ সুত্ত, বুদ্ধদেবের জীবনের শেষ উপদেশেও, তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন— "অবহেলা–মুক্ত হয়ে সাধনা সম্পন্ন করো"।

ওপরের অনুচ্ছেদগুলিতে বেশ কিছু উক্তি তুলে ধরেছি। এই বিষয়ে আরও অনেক বাণী এবং অভিমত সংগ্রহ করা যেতেই পারে। যেইটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি এই বিষয়ে "নানা মুনির নানা মত" নয় — সব মুনিরই এক মত। "শ্রাদ্ধ" এবং যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং হয়তো বা একমাত্র প্রয়োজন হলো শ্রদ্ধা — মনোযোগ —আন্তরিকতা।

ঋণত্রয়

সনাতন ধর্ম অনুসারে জীবনের উপর মানুষের কিছু চিরন্তন দায় ও কর্তব্য আছে। শাস্ত্রমতে, প্রত্যেক মানুষ জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি ঋণ নিয়ে আসে — দেবঋণ, ঋষিঋণ, পিতৃঋণ। এইগুলো পরিশোধ করা গৃহস্থ জীবনের অন্যতম ধর্ম।

  1. দেবঋণ (দেবতাদের প্রতি ঋণ): বেদ অনুযায়ী দেবতারা প্রকৃতি ও মহাজাগতিক শক্তির প্রতীক — সূর্য, চন্দ্র, বায়ু, অগ্নি, বরুণ ইত্যাদি। এঁরা জীবন ও জীবিকার জন্য অনন্ত দান করে চলেছেন। যজ্ঞ, পূজা ও প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষ দেবঋণ শোধ করে। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে— "देवान्भावयतानेन ते देवा भावयन्तु वः।" (বাংলা লিপি: "দেবান্ভাবযতানেন তে দেবা ভাবযন্তু বঃ"। বাংলা অনুবাদ: "তোমরা যজ্ঞ ও উপাসনায় দেবতাদের পূজা করো, দেবতারাও তোমাদের কল্যাণ করবেন।")
  2. ঋষিঋণ (গুরু ও জ্ঞানের প্রতি ঋণ): যে জ্ঞান, বেদ ও ধর্মশিক্ষা আমাদের কাছে এসেছে, তা ঋষিদের অবদান। তাঁদের গবেষণা, সাধনা ও অনুশাসন মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ খুলে দিয়েছে মনুসংহিতা (২.৬) অনুযায়ী: "वेदोऽखिलो धर्ममूलं स्मृतिशीले च तद्विदाम्।" (বাংলা লিপি: "বেদোহখিলো ধর্মমূলং স্মৃতিশীলে চ তদ্বিদাম্"। বাংলা অনুবাদ: "সকল বেদই ধর্মের মূল, আর স্মৃতি ও শীল সেই জ্ঞানীদের জীবনপথ।")
  3. পিতৃঋণ (পূর্বপুরুষের প্রতি ঋণ): মানুষের জন্ম, বংশধারা ও সামাজিক পরিচয় — সবই পূর্বপুরুষদের দান। তাই জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর তাঁদের শান্তির জন্য ক্রিয়া করা প্রত্যেকের কর্তব্য। পিতৃঋণ শোধ হয় শ্রাদ্ধ, পিণ্ডদান, তর্পণ ও বংশধারা রক্ষার মাধ্যমে। শ্রাদ্ধ–ক্রিয়াই পিতৃঋণ মুক্তির প্রধান মাধ্যম।

শ্রাদ্ধ — তিথি, প্রকার

ষোড়শ শ্রাদ্ধ

শ্রাদ্ধের প্রধান প্রকারভেদ ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ১৬ প্রকার। বর্ণানুক্রমিক ভাবে—

  1. অপিদান শ্রাদ্ধ: অতৃপ্ত আত্মাদের জন্য, যাঁদের কেউ স্মরণ করে না, যাঁদের আত্মা অতৃপ্ত। "অপিদানিক" বা "অপকৃত" শ্রাদ্ধ নামেও পরিচিত। 
  2. অগ্নিহোত্রী শ্রাদ্ধ: যাঁরা অগ্নিহোত্র যজ্ঞ পালন করেন, তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট শ্রাদ্ধ। কিছু ক্ষেত্রে এইটি নৈমিত্তিক শ্রাদ্ধের অংশ হিসেবে ধরা হয়।
  3. আদ্যশ্রাদ্ধ: প্রথমবারের শ্রাদ্ধ, মৃত্যুর পরে একাদশ, ত্রয়োদশ বা নির্দিষ্ট দিনে। গত ৮ অগাস্ট ২০২৫ আমার মায়ের জন্য এই শ্রাদ্ধ পালিত হয়েছে। একে প্রথমোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধও বলা হয়।
  4. একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ: বিশেষ এক ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট বা উদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ। এইটি অনেকে মাসিক শ্রাদ্ধ হিসাবে প্রতি মাসে করেন। এইভাবে এক বছর পর্যন্ত মোট ১২টি শ্রাদ্ধ করা হয়।
  5. কর্মাঙ্গ শ্রাদ্ধ: বিশেষ ধর্মীয় কর্ম বা যজ্ঞের অঙ্গ হিসেবে এই শ্রাদ্ধ করা হয়।
  6. কাম্য শ্রাদ্ধ: কোনও বিশেষ কামনা বা উদ্দেশ্যে।
  7. গোষ্ঠী শ্রাদ্ধ: একত্রে অনেকের শ্রাদ্ধ।
  8. তীর্থযাত্রা শ্রাদ্ধ: কোনো তীর্থস্থানে গিয়ে এই শ্রাদ্ধ করা হয়, বিশেষত গয়া-তে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান খুব প্রচলিত।
  9. ত্রিপক্ব শ্রাদ্ধ: তিন পূর্ব প্রজন্মের জন্য একসাথে শ্রাদ্ধ।
  10. নিত্য শ্রাদ্ধ: দৈনন্দিন পিতৃতর্পণ।
  11. নৈমিত্তিক শ্রাদ্ধ: বিশেষ কোনও কারণে, যেমন সূর্যগ্রহণ, কোনও বিশেষ পূজা ইত্যাদিতে।
  12. পার্বণ শ্রাদ্ধ: প্রতি মাসের অমাবস্যা বা বিশেষ তিথিতে।
  13. পুষ্টিশ্রাদ্ধ: সুস্বাস্থ্য, ধন–সম্পদ ও দীর্ঘায়ু লাভের জন্য।
  14. বার্ষিক শ্রাদ্ধ: প্রতি বছর ব্যক্তির মৃত্যুর তিথিতে।
  15. শুদ্ধি শ্রাদ্ধ: মৃত্যুর পর পরিবারের শুদ্ধি লাভের জন্য।
  16. সপিণ্ডীকরণ শ্রাদ্ধ: এক বছর কালাশৌচ পালন করার পর মৃত্যু তিথিতে যে শ্রাদ্ধ করা হয়।

দ্রষ্টব্য, ১৬টি শ্রাদ্ধের সুনির্দিষ্ট তালিকা বিভিন্ন সম্প্রদায়, অঞ্চল এবং মতবাদে ভিন্ন হতে পারে। তবে, মূল বিষয় হলো, মৃত্যুর পর থেকে এক বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত আত্মার শান্তির জন্য এবং তাকে পরলোকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে এই শ্রাদ্ধকর্মগুলো সম্পন্ন করা হয়। এই সবকটি শ্রাদ্ধকেই একত্রে "ষোড়শ শ্রাদ্ধ" বলা হয়, যা একটি সামগ্রিক ধারণাকে প্রকাশ করে।

আদ্যশ্রাদ্ধ

পিতামাতা, বা আত্মীয়–বন্ধুর মৃত্যুর পর অশৌচপালনের পর যেই শ্রাদ্ধকাজ করা হয়, তাকে আদ্যশ্রাদ্ধ বলা হয়। প্রথমবার উদ্দিষ্ট হয় বলে একে প্রথমোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ বলা হয়।

সনাতন ধর্ম অনুসারে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর সাধারণতঃ ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে ১০ দিনে বা ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্রদের ক্ষেত্রে ১৩ দিনে শ্রাদ্ধ হয়। তবে এই নিয়মের বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। মনুসংহিতায় ৫:৮৩ শ্লোক অনুযায়ী— "शुद्ध्येद्विप्रो दशाहेन द्वादशाहेन भूमिप। वैश्यम् पञ्चदशाहेन शूद्रो मासेन शुद्ध्यति॥"(বাংলা লিপি: "শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপ। বৈশ্যপঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি॥" বাংলা অনুবাদ: "ব্রাহ্মণ বর্ণের জন্য ১০ দিন, ক্ষত্রিয় বর্ণের জন্য ১২ দিন। বৈশ্য বর্ণের জন্য ১৫ দিন ও শূদ্র বর্ণের ৩০ দিন অশৌচ বিধান নির্ধারিত॥")। 

এছাড়াও, আঞ্চলিক বা সাম্প্রদায়িক প্রথা ও ব্যক্তি বা পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এইটা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। স্বামী জীবিত থাকাকালীন অপুত্রক/নিঃসন্তান অবস্থায় স্ত্রীর মৃত্যু হলে, কিছু সনাতনী নবমী তিথিতে তাঁদের শ্রাদ্ধ করেন (যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাদশ, ত্রয়োদশ ইত্যাদি দিবসেই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হয়)। নাথ সম্প্রদায়ে অবিবাহিত মৃতা মহিলার শ্রাদ্ধ মৃত্যুর পর চতুর্থ দিনে হয়। আর কোনও অবিবাহিতা মহিলা যদি তাঁর মৃত পিতা বা মাতার শ্রাদ্ধ করেন, সেইটিও মৃত্যুর পর চতুর্থ দিনে হয়।

ব্যক্তির মৃত্যু থেকে শ্রাদ্ধ কাজ শেষ হওয়া অবধি সময় এবং কার্যকালকে মূলতঃ পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।

  1. অন্ত্যেষ্টি: মৃতদেহ সৎকার বা দাহ। একে "শেষ যজ্ঞ"–ও বলা হয়। "অন্ত্যেষ্টি" শব্দটি "অন্ত্য" ও "ইষ্টি" এই দুইটি শব্দ যোগ করে, যার অর্থ যথাক্রমে "শেষ" ও "যজ্ঞ"।
  2. অশৌচ: অশৌচ শব্দের অর্থ হলো শুচিতা বা পবিত্রতার অভাব। মৃত্যুর পর পরিবার যে নির্দিষ্ট সময় শুচিহীন বা শুদ্ধিহীন থাকে।
  3. ঘাটকাজ বা ঘাটশ্রাদ্ধ: ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর দিন থেকে দশম দিনে এবং অন্যান্য বর্ণের ক্ষেত্রে একাদশ দিনে নদী বা পুকুরের ঘাটে পূরক পিণ্ড দান করা হয়। আমাদের নদীমাতৃক সভ্যতা। তাই নদীর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নদী কাছাকাছি না থাকলে পুকুর বা দীঘির ঘাটে এই কাজ করা যেতে পারে। "পূরক পিণ্ড" অর্থ এই দিন যে পিণ্ডদান করা হয় সেইটা মৃত ব্যক্তির আহার হিসাবে নয়, বরং মৃত ব্যক্তির পারলৌকিক দেহ গঠনের উদ্দেশ্যে। এইদিন ক্ষৌরকার্যও সম্পন্ন হয়। অশৌচ পালনকারী পুরুষ ব্যক্তির মস্তকমুণ্ডন এবং গোঁফ–দাড়ি কাটা হয়।
  4. শ্রাদ্ধ: মৃত ব্যক্তির স্মরণ, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। আত্মার জন্য তর্পণ, অন্ন–জল দান, ব্রাহ্মণ ভোজন ও মন্ত্রোচ্চারণ।
  5. নিয়মভঙ্গ: অশৌচ শেষে পুনরায় স্বাভাবিক ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মে প্রবেশ করার সময়। শ্রাদ্ধের পর প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে এই নিয়মভঙ্গ অনুষ্ঠিত হয়। এইদিন আদ্যশ্রাদ্ধ পর্ব শেষ হয়।

অথঃ গরুড়পুরাণ কথা

শ্রাদ্ধবিষয়ক লেখা লিখতে গিয়ে গরুড়পুরাণ–এর কথা উল্লেখ করা আবশ্যক। গরুড়পুরাণ সনাতন ধর্মের প্রধান আঠারোটি মহাপুরাণের একটি, যা মূলতঃ বিষ্ণু ও তাঁর বাহন গরুড়ের সংলাপ আকারে রচিত। এর "প্রেতখণ্ড" অংশে মৃত্যু, আত্মার যাত্রাপথ, যমলোকের বিবরণ, পাপ–পুণ্যের ফল, এবং পুনর্জন্মের প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। মৃত্যুর পর আত্মা কীভাবে দেহ ত্যাগ করে, অশৌচকাল, শ্রাদ্ধ ও পিতৃতর্পণের গুরুত্ব, এবং কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ, নরক বা পুনর্জন্ম লাভ করে, এইরকম বহু বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। গরুড়পুরাণে মৃত্যুভয় দূর করার জন্য ভক্তি, সৎকর্ম ও ধর্মাচরণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রথম পর্বের যাত্রা: ১–১৩ দিন

গরুড়পুরাণ প্রেতখণ্ড অনুসারে মৃত্যুর পর আত্মার ১৩ দিনের যাত্রাপথ এইরকম—

  • প্রথম দিন: আত্মা মৃত্যুর পরপরই স্থূলদেহ ত্যাগ করে, তবে কিছু সময় নিজের দেহ ও আশপাশের পুরনো পরিবেশের সাথে যুক্ত থাকে।
  • দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিন: আত্মা ধীরে ধীরে নতুন এক মধ্যবর্তী দেহ (সূক্ষ্মদেহ) ধারণ করে এবং যমদূতের আহ্বানে যাত্রা শুরু করে। পরিবারের শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদান আত্মাকে শক্তি জোগায়।
  • ষষ্ঠ থেকে দশম দিন: আত্মা যমলোকের দিকে বিভিন্ন ক্লান্তিকর ও ভয়াবহ অঞ্চল অতিক্রম করে। পিণ্ড ও জলদান এই যাত্রায় খাদ্য ও শক্তি হিসেবে কাজ করে।
  • একাদশ দিন: আত্মা যমদূতের সঙ্গে যমলোকের দুয়ারে পৌঁছয় এবং কর্মফলের বিচার শুরু হয়।
  • দ্বাদশ দিন: ঘাটকাজ বা ঘাটশ্রাদ্ধের প্রার্থনার মাধ্যমে এই দিন আত্মার লুপ্তপ্রায় সূক্ষ্ম দেহ পিণ্ডজ শরীরে রূপান্তরিত হয়।
  • ত্রয়োদশ দিন: শ্রাদ্ধের মাধ্যমে আত্মার যাত্রাপথ সুগম, শান্তিময় ও প্রশস্ত করা হয়।

দ্বিতীয় পর্বের যাত্রা: ১৪–৩৬১ দিন

চতুর্দশ দিনে আত্মা যমলোকের মূলপথে যাত্রা শুরু করে। এই যাত্রা খুবই দীর্ঘ এবং কষ্টকর। আত্মাকে নানা কঠোর পরীক্ষা এবং বাধা অতিক্রম করতে হয়। এই সম্পূর্ণ পথ অতিক্রম করতে আত্মার প্রায় এক বছর (দিনের হিসাবে ৩৪৮ দিন) সময় নেয়। 

মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধের দিন অবধি ১৩ দিন + ৩৪৮ দিনের যমলোকে যাত্রা = ৩৬১ দিন — পারলৌকিক যাত্রার সময়। ব্রাহ্মণ বর্ণের ক্ষেত্রে এইটি ৩৫৯ দিন হবে। এছাড়া বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মতভেদে এই সংখ্যাটি সামান্য এদিক–ওদিক হতে পারে। 

স্বর্গ অথবা নরক

গরুড়পুরাণ অনুসারে ৩৫৯ অথবা ৩৬১ দিনের এই যাত্রা শেষে আত্মার যমলোকের বিচার সম্পূর্ণ হয় এবং তার পরবর্তী গন্তব্য নির্ধারিত হয়। সৎকর্ম ও অসৎকর্মের বিচার করে সিদ্ধান্ত হয় মৃত ব্যক্তি স্বর্গে অথবা নরকে যাবেন। সৎকর্মের প্রাধান্য থাকলে আত্মা স্বর্গে (ইন্দ্রলোকে) প্রেরিত হয়, যেখানে তিনি সুকর্মের ফল পান। অসৎকর্মের প্রাধান্য থাকলে আত্মা নরকে শাস্তি পান। মিশ্র ফল থাকলে আত্মা আংশিকভাবে উভয় অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

লক্ষ্যণীয়, গরুড়পুরাণ স্বর্গের এবং নরকের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। গরুড়পুরাণে স্বর্গকে সৎকর্মের ফলপ্রাপ্তির স্থান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে আত্মা আনন্দ, শান্তি ও সমৃদ্ধির অভিজ্ঞতা লাভ করে। স্বর্গে দেবলোক, ইন্দ্রলোক, গন্ধর্বলোক ইত্যাদি বিভিন্ন স্তর আছে। এখানে বাসিন্দারা অমৃত পান করে, দেবতাদের সান্নিধ্যে থাকে, গন্ধর্বদের সঙ্গীত ও অপ্সরাদের নৃত্য উপভোগ করে। রত্নখচিত প্রাসাদ, সুগন্ধি বাগান, নিরবচ্ছিন্ন আলো ও কষ্টহীন জীবন — এইসব স্বর্গের বৈশিষ্ট্য।

নরককে আত্মার অসৎকর্মের শাস্তির স্থান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই পুরাণে ২৮ প্রকার নরকের নাম এবং প্রদত্ত নরক যন্ত্রনার উল্লেখ আছে, যেমন রৌরব, মহারৌরব, তমিস্র, অন্ধতমিস্র, কুম্ভিপাক, কালসূত্র, অন্ধকূপ ইত্যাদি। প্রতিটি নরকে নির্দিষ্ট পাপ যেমন যেমন চুরি, হত্যা, ব্যভিচার, প্রতারণা বা গুরু–অপমানের জন্য বিভিন্ন রকম শাস্তি। এইসকল শাস্তির মধ্যে রয়েছে আগুনে পোড়ানো, বরফের জলে ডুবিয়ে রাখা, ধারালো অস্ত্রে বিদ্ধ করা, হিংস্র প্রাণীর দ্বারা আক্রমণ, ক্ষুধা–তৃষ্ণার অসহনীয় কষ্ট ইত্যাদি। এই শাস্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আত্মা সেখানে অবস্থান করে, তারপর অবশিষ্ট কর্মফল অনুযায়ী পুনর্জন্ম লাভ করে।

স্বর্গ অথবা নরকের এই অবস্থানের পর আত্মা পুনর্জন্মের জন্য প্রস্তুত হয়। নরক বা স্বর্গের ফল পাওয়ার পরে আত্মা তার কর্ম ও কর্মফল অনুযায়ী একটি নতুন মানবীগর্ভে প্রবেশ করে। এই গর্ভপ্রবেশও যমরাজের অনুমতি ও নিয়ম অনুযায়ী ঘটে।

বাৎসরিক শ্রাদ্ধ

বাৎসরিক শ্রাদ্ধ সাধারণত এই ৩৫৯ অথবা ৩৬১ দিনের শেষে (বা সৌরবর্ষ অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে) পালন করা হয়, যা আত্মার যাত্রার সমাপ্তি সূচক। এইসময় প্রয়োজন একটি তিথি যেইদিন শ্রাদ্ধ কাজ করা যেতে পারে। ৩৫৯ দিনে ব্রাহ্মণদের বা ৩৬১ দিনে অন্যান্য সকল বর্ণের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ করা যেতে পারে। আর যেহেতু, ব্যক্তির মৃত্যুর দিনটিই একটি তিথি, অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুর এক বছর পর একই দিনে শ্রাদ্ধ করেন। অথবা, সেই মাসের অমাবস্যা তিথিতেও শ্রাদ্ধের কাজ করা যেতে পারে। আদ্যশ্রাদ্ধের মতোই বাৎসরিক শ্রাদ্ধেও স্মরণ, পূজা, পিণ্ডদান, হোম, ব্রাহ্মণভোজন ইত্যাদি থাকে। 

দাবি পরিত্যাগ (Disclaimers)

দাবি পরিত্যাগ নিয়ে কয়েকটি কথা বলি—

  1. আমি সনাতন ধর্ম অনুযায়ী শ্রাদ্ধের প্রক্রিয়া, এবং মৃত্যুর পর যাত্রার বর্ণনা দিয়েছি। কিন্তু এই বিষয়টি অত্যন্ত বিস্তারিত এবং বহু গ্রন্থে এর বিবরণ রয়েছে। তাই বর্তমান প্রবন্ধটিকে একটি সংক্ষিপ্ত রচনা হিসাবেই গণনা করবেন।
  2. বিষয়গুলো শুধু বিস্তারিতই নয়, জটিলও বটে। বিশেষতঃ মৃত্যুর পরের দীর্ঘ যাত্রা সম্পর্কে চিন্তা করা, লিপিবদ্ধ করা — বোধ করি, সহজ নয়।
  3. আমি এই প্রবন্ধে মনুসংহিতা, গরুড়পুরাণ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ইত্যাদি থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, কিন্তু আপনাকে কোনও কিছুই বিশ্বাস করতে বলছি না। আমি নিজেও এইসকল বর্ণনার অনেকাংশের অর্থ ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি না। বোধ, অনুভূতি ছাড়া বিশ্বাস অচল। অতএব, আপনি নিজের মতো করে বিশ্বাস–অবিশ্বাস অথবা জিজ্ঞাসা–অনুসন্ধান করবেন।

আর "মুক্তি"? তবে কি আমার "মোক্ষলাভ" হবে না গো?

দাবি পরিত্যাগ বা ডিসক্লেইমার্স কোনও লেখায় শুরুতে বা একেবারে শেষে থাকে। তবে, এইখানে শেষের পরেও একটা শেষ অংশ আছে। 

আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন এই পরিচ্ছেদে দৈহিক মৃত্যুর পরবর্তী যাত্রা নিয়ে অনেক কথা লিখেছি, কিন্তু "মুক্তি" বা "মোক্ষ" নিয়ে কিছু লিখিনি। এই শেষ অংশে "মুক্তি" সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখি (যদিও এই বিষয়টি একেবারেই সংক্ষেপে লেখার বিষয় নয়)। যেই ব্যক্তি মোক্ষলাভ করেছেন, গরুড়পুরাণ ও উপনিষদ্‌ মতে স্বাভাবিক আত্মার থেকে তাঁর যাত্রাপথ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই আত্মা যমলোকের পথে যাত্রা করে না বা স্বর্গ–নরকের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় না। পরিবর্তে, তাঁরা সরাসরি পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যান।

এইখানে একটা তথ্য দিই। এই যে "মুক্তি" বা "মোক্ষ"-এর সম্পর্কে বললাম, সনাতন, বৌদ্ধ এবং আরও অনেক ধর্মমতে এইটাই জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। যতদিন না নির্বাণ হচ্ছে ততদিন এই সংসারে বারবার ফিরে আসতে হবে। নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, পাছে পাছে। বৃত্তাকার গতিতে চাকা ঘোরার মতো সুখ ও দুঃখের অবস্থা পরিবর্তিত হবে। জীবন কখনও রূপকথা, তো কখনও চুপকথা। চক্রাকারে ফিরে ফিরে আসবে। তাই জন্যই হয়তো আদি শঙ্করাচার্য হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন— "ভজ গোবিন্দম্‌, ভজ গোবিন্দম্‌, ওহে মোহাচ্ছন্ন মন, এখনও তোমার সময় আছে। গোবিন্দ ভজনা করো, কৃষ্ণকে স্মরণ করো। ... ... ফুলের পাতায় থাকা জল যেমন অতিস্বল্প ও অস্থির, তেমনই মানুষের জীবন। প্রলোভন মনকে খুব চঞ্চল করে। জেনো, এই জগৎ ব্যাধি ও অহংকারে আক্রান্ত, দুঃখ–কষ্টে ভরা। ... ... ওগো আমার মূঢ় মন, আর সময় নষ্ট করো না। সময় থাকতে থাকতে... ভজ গোবিন্দম্‌।"

চতুর্থ অধ্যায়, প্রথম পরিচ্ছেদ এইখানেই শেষ করলাম।

চরৈবেতি।

স্বপ্না দত্ত, আমার মা (Swapna Dutta, my Mother)


This page was last updated on: 9 August 2025
Number of revisions on this page: 2
Internet Archive Backup: See here

No comments:

Post a Comment

Please post your comment in this section. Keep it friendly and constructive by following our Comment Policy.
We kindly request you to use your Google account or provide your Name and Website URL when commenting. Please use anonymous comments only if necessary.