জপ, নামজপ বা ধ্যানজপ বিভিন্ন ধর্মের প্রথা এবং আচার–অনুষ্ঠানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে দেখলেও জপের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সমাজে প্রচুর সংখ্যক মানুষের মধ্যে জপের প্রতি উৎসাহ এবং জপের অনুশীলন লক্ষ্য করা যায়।
জপ সম্পর্কে একটা প্রবন্ধ লেখার অনেকদিন ধরে খুব ইচ্ছে ছিল। এই প্রবন্ধ সিরিজের মূল লক্ষ্য জপ বিষয়ে বোধ্য–অবোধ্য সবকিছু জড়ো করে লেখা নয়। বরং, যতটা যা বুঝতে পারছি, অনুভব করছি, অভ্যাস করছি — বা শুধু যতটা আমি নিশ্চয়তার সাথে লিখতে পারি ততটাই — সেইগুলোই গুছিয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও রেফারেন্সসহ লেখার চেষ্টা করবো।
এই লেখার বিভিন্ন অধ্যায়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রচুর ধর্মীয় রেফারেন্স থাকবে। তবে মূল প্রচেষ্টা থাকবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে জপ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার। জপ বা নামজপ সম্পর্কে প্রথম অধ্যায় শুরু করছি।
জপ কী?
জপ একটা অনুশীলন যেখানে কোনও একটা বিশেষ শব্দ, নাম, বা মন্ত্র বারবার উচ্চারণ করা হয়। বিভিন্ন গতিতে, বিভিন্ন ছন্দে মনে, সশব্দে বা স্বল্প শব্দের সাথে পুনরাবৃত্তিই হলো জপ। নামজপ জপের অত্যন্ত জনপ্রিয় রূপ। রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, আল্লাহ ইত্যাদি নাম অনেকে জপমন্ত্র হিসাবে উচ্চারণ করেন। ঈশ্বরের নাম ছাড়াও, বিশেষ ব্যক্তি, প্রিয় ব্যক্তি, কোনও শব্দ, বাক্য, বা মন্ত্রও জপ করা যেতে পারে।
![]() |
সাধিকা মীরা। তাঁর ভক্তির প্রধান ভিত্তি ছিল অবিরাম নামজপ ও ভজন। চিত্রসূত্র: উইকিমিডিয়া কমন্স |
জপের প্রকারভেদ
জপ প্রধানত তিনরকম—
- বাচিক জপ: যখন মন্ত্র বা নাম স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করা হয়।
- উপাংশু জপ: ঠোঁট নড়ে কিন্তু শব্দ শোনা যায় না, কেবল নিজে শোনার মতো।
- মানস জপ: একেবারে মনে মনে জপ করা হয়, ঠোঁট বা জিহ্বা নড়ে না।
জপ কেন করবেন?
আপনি কেন জপ করবেন, বা কতদিন, কতক্ষণ জপ করবেন, তা আপনাকে নিজেকেই ঠিক করতে হবে।
যদি ইচ্ছা না হয়, বা জপের মধ্যে আপনি কোনও বিশেষত্ব না দেখেন, তবে হয়তো জপ না করাই ভালো।
যদি আপনার ইচ্ছা বা উৎসাহ হয় আপনি জপ করতে পারেন। জপ করার কয়েকটি কারণ নীচে দিচ্ছি। এইগুলি দেখতে পারেন, তবে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে তাগিদ না এলে আর কারণ খুঁজে না পেলে জপ বেশিদিন চলবে না হয়তো। অল্প কয়েকদিন পরেই হয়তো দেখবেন জপ করতে ভুলে যাচ্ছেন বা জপ করতে ইচ্ছে করছে না। সকালবেলা থাক, সন্ধ্যেবেলা করবো। আজ থাক, কাল করবো। — এইভাবেই চলতে থাকবে। তাই, আপনি কেন জপ করবেন, তা আপনার পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নিজেই ঠিক করুন।
জপ করার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়ে থাকে। জপ অনুশীলন মানসিক, আত্মিক, এবং শারীরিক — তিন স্তরে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। এটি শুধু ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া নয়, বরং একটি মনসংযমের পদ্ধতি, যা মানুষের দেহ, মন এবং চেতনার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। জপ করার মূল উদ্দেশ্য হলো মনকে নিয়ন্ত্রণে আনা, চেতনার গভীরে প্রবেশ করা এবং অস্থিরতাকে কমানো।
আমরা যদি মনোসংযোগ বাড়াতে চাই, অথবা কোনও ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়ের প্রতি মনটাকে একাগ্র করতে চাই, তবে জপ এক কার্যকরী পদ্ধতি। কিন্তু, কেন আমরা একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করতে চাইবো? কারণ কী?
» হতে পারে যে চারপাশের নানা বিষয়, ঘটনা আমাদের বিব্রত করে। চেষ্টা করেও মনকে শান্ত করতে পারছি না। মন ক্ষণে রুষ্ট, ক্ষণে তুষ্ট। রুষ্ট তুষ্ট ক্ষণে ক্ষণে।
» হতে পারে যে মনের মধ্যে একটা তীব্র ইচ্ছে রয়েছে কোনও কিছুর প্রতি নিরবচ্ছিন্ন মনোসংযোগ করার। ভালোবাসার। অঝোরে যেমন বৃষ্টি ঝরে — ঠিক তেমন। ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম — ঠিক তেমন।
» হতে পারে আমাদের মনের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত চিন্তা, একটানা বকবক নিয়ে আমরা নিজেরাই বিব্রত। ভাবতে চাই না তবু ভেবে ফেলি। করতে চাই না তবু করে ফেলি। প্রতিটা কাজ আগে একটা চিন্তা হিসাবে থাকে — তারপর সেই চিন্তা কাজ হিসাবে প্রকাশ পায়। মনের মাঝে অনিয়ন্ত্রিত চিন্তার বুদবুদ রয়েছে যখন, করতে না চাওয়া কাজ করে ফেলাই স্বাভাবিক। পরে হয়তো আক্ষেপ হয় — কেন ভাবলাম, কেন করলাম?
» হতে পারে যে আমরা হয়তো সদ্য কোনও আঘাত পেয়েছি। মন খুব চঞ্চল — ব্যথিত। মনটাকে শান্ত করতে চাইছি — যন্ত্রণা কমাতে চাইছি।
» হতে পারে আমরা শুধু বর্তমানে মনোসংযোগ করতে চাইছি। অতীতের স্মৃতিচারণা নয়, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা নয়, কাল্পনিক দুনিয়ায় অলস ভ্রমণ নয় — শুধু বাস্তবে বর্তমানে থাকতে চাইছি — বাঁচতে চাইছি।
উপরোক্ত সবকটিই পরিস্থিতি এবং এইসকল ছাড়া আরও বিষয় জপ করার কারণ হিসাবে গণ্য হতে পারে।
জপ করার জন্য জপ করা — মানে জপ করতে ভালো লাগে তাই জপ করা — এইটাও জপ করার একটা অত্যন্ত বড় এবং শক্তিশালী কারণ। একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে জপ অনুশীলন করলে অভ্যাসবশত মন নিজে থেকেই নামজপ শুরু করে দেয়। গুরু নানক "অজপা" অবস্থার উল্লেখ করেছিলেন যখন জপ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হতে থাকে, বাহ্যিক চেষ্টার প্রয়োজন হয় না।
জপের ছন্দ
একই শব্দ, নাম, বা মন্ত্র বারবার উচ্চারণ বা জপ করলে একটা ছন্দের সৃষ্টি হয়। একজন ব্যক্তি নিজেও বিশেষ কোনও ছন্দে জপ করতে পারেন। ধরুন, একটা একজন ব্যক্তি ॐ প্রণবমন্ত্র জপ করছেন। এখন তিনি এই জপ বিভিন্ন রকম ভাবে পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। যেমন—
অথবা,
ॐ ॐ ॐ ॐ
ॐ ॐ ॐ ॐ
ॐ ॐ ॐ ॐ
ॐ ॐ ॐ ॐ
এইখানে ॐ একসাথে চারবার করে উচ্চারণ করা হচ্ছে। বিরাম নিয়ে আবার জপ শুরু করা হচ্ছে।
এইটা এইভাবেও করা যেতে পারে— ॐ ॐ ॐ ॐ — চার বার জপ করে স্বল্পবিরাম। ৪×৪=১৬ বার অথবা ৪×২৭=১০৮ বার অথবা ৪×২৫২=১০০৮ বার জপ করার পর দীর্ঘ বিরাম।
বৌদ্ধধর্মের একটা উদাহরণ দিয়ে বলি—
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
ধম্মং শরণং গচ্ছামি।
সংঘং শরণং গচ্ছামি।
এই ত্রিশরণ মন্ত্র একসাথে বা শুধু প্রথম অংশ "বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি" ছন্দসহ জপ করা যেতে পারে।
জপ গণনা এবং গণনাবিহীন জপ
১০৮ বার বা ১০০৮ বার জপ করা সাধারণত প্রচলিত। তবে আপনি অন্যান্য সংখ্যা ৫১, ১০১, ১০০১, বা যে কোনও লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। ১ বা ৪ দিয়ে যে ভাগ করতে হবে, এমন নয়। আপনি চাইলে ২, ৪, ৮, ১৬ দিয়ে ভাগ করেও সাইকেল করতে পারেন। ১–এর সাইকেলে অভ্যাস (ॐ — ॐ — ॐ — ॐ ... ) সবথেকে সহজ। আপনি যত বড় সাইকেল করবেন হয়তো কঠিনটা তত বেশি হবে।
আপনাকে যে সংখ্যা গুণে গুণেই করতে হবে তার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অনেকে জপ করার সময় কতবার জপ করলেন তার একদমই হিসেব রাখেন না। তাঁদের মত এই যে জপ করার সময় প্রতি মুহূর্তে এক, দুই, তিন, চার করে গুণে গেলে মনোযোগ আর মনের শক্তি জপ এবং জপের বিষয় থেকে এই গণনাতেই বেশি চলে যায়।
একই ভাবে অনেকে জপ করার ক্ষেত্রে জপের সময়ও, মানে কতক্ষণ জপ করলেন, তাও লক্ষ্য করেন না। এইখানে যুক্তি, ধরুন আপনি আপনার অত্যন্ত প্রিয় মানুষের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন, আপনি কি মিনিট সেকেন্ডের হিসেব রাখবেন? এক বা দুই ঘণ্টা হয়ে গেলেই নিজেকে বাহবা দেবেন? নাকি যতটা বেশি সময় সম্ভব আপনি আপনার প্রিয় মানুষের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন? তাহলে, জপ, ধ্যান ইত্যাদির ক্ষেত্রেই বা সময়ের হিসেব রাখা কেন?
সঠিক বক্তব্য। এইরকম করতে পারলে খুব ভালো হয়। সাথে সাথে, বাস্তব সমস্যাও থাকতে পারে। একটা কথা শুধু ভালো লাগে বলে বলে দিলাম, করতে পারলাম না, তাহলে তো কিছু কাজের কাজ হয় না। করতে পারলে তো খুবই ভালো, নইলে দেখবেন প্রথম কয়েকদিন পর জপের বা ধ্যানের সময় কমে আসছে, বা আমরা জপ করতে ভুলে যাচ্ছি। আর ঐদিকে আমরা সময়ের বা জপের হিসেবও রাখছি না। ফলে, যারা গুণে বা সময় ধরে জপ করছেন তাঁদেরও প্রচেষ্টা অর্থপূর্ণ — তাঁরা নিজেদের অনুশীলনকে আরও বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
আমরা গুণে অথবা না গুণে, অথবা মিশ্রভাবে জপ করতে পারি। এই মিশ্রভাবে করার অর্থ একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা। ধরুন, দিনে কমপক্ষে ১০৮ বার বা ১৫ মিনিট জপ করবোই। এই অংশটার হিসেব রাখবো। আর তারপর সারাদিন কতক্ষণ বা কতবার জপ করবো তার আর কোনও হিসেব রাখবো না। এতে রোজকার শৃঙ্খলাও হলো, আর অহেতুক প্রতি মুহূর্তে সংখ্যা গুনে নিজের মনোযোগ নষ্ট করা হলো না।
যেই পদ্ধতি আপনার সুবিধা হবে এবং আপনি আন্তরিকভাবে করতে পারবেন, সেই পদ্ধতিতেই জপ করবেন।
জপের সময় — কখন জপ করবেন?
জপের বাঁধাধরা নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনার যখন ইচ্ছে তখন জপ করতে পারেন। নিজের সুবিধের জন্য প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়েও জপ করতে পারেন।
অনেকে ব্রহ্মমুহূর্ত, ভোর সাড়ে তিনটে থেকে সূর্যোদয়ের আগে অবধি, জপ করেন। অনেকে সকালবেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে স্নান করে জপ করেন। অনেকে সন্ধ্যাকালীন প্রার্থনার সময় জপ করেন। আবার অনেকে রাতে শুয়ে পড়ার পর জপ করেন। এইক্ষেত্রে লক্ষ্য থাকে যে যতক্ষণ না ঘুম আসছে ততক্ষণ জপ চালিয়ে যাওয়া। তারপর যখন ঘুম এলো তো এলো।
অনেকে বিশেষ তিথি বা মুহূর্তে, যেমন একাদশী, পূর্ণিমা, কোনও পুজো–পার্বণ, নিজের বা প্রিয় মানুষের জন্মদিন, সূর্যগ্রহণ–চন্দ্রগ্রহণ এই সব সময়ে জপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান রমজান মাসে রোজা রাখার সময় একনিষ্ঠভাবে অবিরাম জিকির করেন — আল্লাহর নাম, সিফত (গুণ) বা বিশেষ বাক্য (যেমন আল্লাহু আকবর) পুনরাবৃত্তি করেন।
অনেককে দেখেছি কিছু কাজ শুরু করার আগে, বা করার সময় জপ করেন। সবথেকে বেশি দেখা যায় দুপুরে বা রাতে খাবার খাওয়ার আগে নির্দিষ্ট সংখ্যক বার ঈশ্বর বা অভীষ্ট জপ করা। এছাড়াও কোনও বড় কাজ বা প্রজেক্ট শুরুর আগে, কোথাও যাত্রা শুরু করার আগেও অনেককে জপ করতে দেখা যায়। ছাত্র–ছাত্রীদের মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগে ভগবানের নামজপ করার প্রবণতা লক্ষ্য করে থাকবেন।
অনেকে যখন একলা থাকেন বা কিছু কাজ থাকে না — অলস মস্তিষ্ক যেন শয়তানের কারখানা না হয়ে যায় — জপ করেন।
অনেক সময় অনেকের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখি অহেতুক বাজে বকছেন। কিছু সময় এড়ানোও যায় না, কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারা যায় যে অহেতুক বাজে বকা হচ্ছে। এরকম সময়ে এক উপায় হচ্ছে— যা হচ্ছে হোক। একজন গলার আওয়াজ চড়ালে আমি আরও বেশি গলার আওয়াজ চড়াব। একজন "আমি জানি, আমি এইটা করেছি, আমি এইটা করতে পারি" বললে তাকে টেক্কা দেওয়ার জন্য "আমি আরও জানি" দাবী করবো। মানে পুরোপুরি সেই সময়ের আবেগ এবং অহংপ্রদর্শনের লড়াইতে নেমে পড়া। আরেকটা উপায় হলেও হতে পারে। অযথা চিৎকার প্রতিযোগিতায় না নেমে জপে মনোনিবেশ করা এবং ন্যূনতম উত্তর দেওয়া। এইরকম অভ্যাস করলে এইক্ষেত্রে বড়জোর যা হবে অন্যজনের মনে হতে পারে আপনি হয়তো তাঁর কথা মন দিয়ে শুনছেন না। বিশেষত যখন দেখা যাবে একজন আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপনার ওপর রাগারাগি, গালাগালি করছেন, আর তার উত্তরে আপনি রেগে যাচ্ছেন না — শান্তভাবে উত্তর দিচ্ছেন — স্বাভাবিকভাবেই একটা আচরণের পার্থক্য দেখা যাবে।
অনেকে মনের বিশেষ বৃত্তির সাথে লড়াই করতে জপ করেন। যেমন, মনের মাঝে পরকীয়া যৌনচিন্তা এলেই, সেটা থামাতে অনেকে জপ বা প্রার্থনা করেন। একই ভাবে অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা, বা কোনও ব্যক্তির সর্বনাশ হলে আমার কত আনন্দ হবে — এইরকম নেগেটিভ চিন্তা মনে এলে জপ বা প্রার্থনা করা যেতে পারে।
![]() |
চৈতন্য মহাপ্রভু। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র প্রদান করেছিলেন। চিত্রসূত্র: উইকিমিডিয়া কমন্স |
নিয়মানুবর্তিতা
জপের ক্ষেত্রে (আসলে সব কাজেই) নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ করে জপ শুরু করলাম, প্রথম দিন ১০,০০০ বার, দ্বিতীয় দিন ৬,০০০ বার জপ করলাম, তৃতীয় বা চতুর্থ দিন থেকে আর করলামই না — এইরকম করলে অগ্রগতি বোধ হয় ধীরে হবে।
নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজনীয়। এর মানে এই নয় প্রতিদিন বা দিনে দুইবেলাই জপ করতে হবে। তবে, নিজের মতো করে একটা নিয়মানুবর্তিতা অবশ্যই প্রয়োজন।
কষ্ট করে দাঁত–মুখ খিঁচিয়ে জপ
আনন্দমার্গের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাতরঞ্জন সরকার লক্ষ্য করেছিলেন যে জপ করার সময় অনেকে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে জোর করে করেন — যেন খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রভাতরঞ্জন সরকার যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে ধীরে ধীরে জপ করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
এই পর্যবেক্ষণ এবং পরামর্শ যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। আমরা জপ ধ্যানের সময় এই অসুবিধা হয়তো অনুভব করেছি। সারা বিশ্বে "মাইন্ডফুলনেস" এখন প্রচুর চর্চা হচ্ছে। আমরা যদি "মাইন্ডফুলনেস" অনুশীলন শুরু করি সবথেকে আগে হয়তো খেয়াল করবো আমাদের মন আগের থেকে বেশি অস্থির হয়ে যাচ্ছে। ধ্যান যখন শুরু করবো, হয়তো নজরে পড়বে যে আগে হয়তো ২০–৩০ মিনিট এমনিই বসতে পারতাম, ধ্যান শুরু করার পর যেন ৫ মিনিটও এক জায়গায় চুপ করে বসতে পারছি না। স্বামী বিবেকানন্দ "রাজযোগ" এবং "পাতঞ্জল যোগসূত্র" বর্ণনা করার সময় বলেছেন যে মনকে শান্ত করার প্রাথমিক অবস্থায় মনে অনেক চিন্তা ভাবনা বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়ায়।
শান্তভাবে নিয়মিত অভ্যাস এইক্ষেত্রে উপকারী। খুব কষ্ট করে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে জপ না করাই ভালো। একদিনেই এক লাখ বার জপ করতেই হবে এমন দিব্যি কেউ দেয়নি। আস্তে আস্তে স্বতঃস্ফূর্ত এবং আন্তরিকভাবে জপ করুন।
প্রথম অধ্যায় এইখানেই শেষ করলাম। পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে জপ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
Japa (জপ)
- ● Read in English: First Chapter, Second Chapter
- ● বাংলায় পড়ুন: প্রথম অধ্যায়, দ্বিতীয় অধ্যায়
- ● Tools: Japa Counter
Number of revisions on this page: 2
Internet Archive Backup: See here
No comments:
Post a Comment
Please post your comment in this section. Keep it friendly and constructive by following our Comment Policy.
We kindly request you to use your Google account or provide your Name and Website URL when commenting. Please use anonymous comments only if necessary.